দেশের তৃতীয়তম বৃহৎ আলু উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাট। সেই জেলায় এবার আলু চাষ করতে গিয়ে সার সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার না পাওয়ায় বেশি দামে সার কিনে আলু চাষ করতে হচ্ছে তাদের। তবে বেশি দামে সার কিনে আলু চাষ করে ফলন ও দাম ভালো না পেলে ক্ষতির সম্মখিন হতে হবে বলেও জানান তারা।
এবার সরকার নির্ধারণ করে দেয় টিএসপি সার প্রতি বস্তা ১১.০০ টাকা, এমওপি ৭৫০ টাকা, ডিএপি ৮০০ টাকা ও ইউরিয়া সার ৮০০ টাকা করে বেধে দেওয়া হয়, কিন্তু জেলায় অন্যান্য সার গুলো পেলেও টিএসপি সার একইবারের পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের।
সদর উপজেলার তুলাট গ্রামের কৃষক গাজিউল ইসলাম দৈনিক অধিকারকে জানান, তিনি তার চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করবেন সেই কারণে তিনি সার কিনতে গিয়ে অন্যান্য সারগুলো ঠিক দামে পেলেও টিএসপি সরকার নির্ধারিত মূল্যে পাননি । তিনি আরও জানান এবার সার নিতে গিয়ে যে, হয়রানীর শিকার হতে হয়েছে, ব্যবসায়ীরা বলে আজ নেই কদিন পরে এসো,আমি কয়েকদিন ঘুরার পর সেই সার কোন মতে নিয়ে এসে জমিতে আলু লাগাচ্ছি।
পাঠানপাড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন ও দেলোয়ার হোসেন দৈনিক অধিকারকে জানান, সরকার নির্ধারিত টিএসপি ১১শ টাকা বিক্রি করার কথা থাকলেও সেটি তাদের কাছ থেকে ১৪২০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে, এমওপি নেওয়ার কথা ৭শ ৫০ টাকা করে সেখানে নেওয়া হচ্ছে ৮শ টাকা, ডিএপি ৮শ নেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে নেওয়া হচ্ছে ৯শ টাকা করে, অন্যদিকে শুধু ইউরিয়া সারের দাম ৮০০ সেটি ৮০০ করেই নেওয়া হচ্ছে।
তারা জানান, এভাবে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে, কিন্তু কৃষি বিভাগের কোনো তদারকি নেই।
তারা আক্ষেপ করে বলেন, এই কৃষকদের দিকে কারর নজর পরে না, আমরা এতো কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করি অথচ আমাদের দিকে কেউ তাকাই না।
সদর উপজেলার বামনপুর চার মাথার খুচরা সার ব্যবসায়ী উত্তম কুমার ও পাঁচবিবি উপজেলার শিরট্রি বাজারের খুচরা সার ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান দৈনিক অধিকারকে জানান, তাদের বরাদ্ধের যা সার তা চাহিদার চারভাগের এক ভাগও পাননি, সেই কারণে বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশি দামে সার সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। তারা আরও অভিযোগ করেন ডিলাররা তাদের ঠিকমতো সারর দিচ্ছেন না।
জয়পুরহাট ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও বিসিআইসির ডিলার ও মিনহাজুল ইসলাম (কমল) দৈনিক অধিকারকে জানান, কৃষকের চাহিদার তুলনায় তাদের বরাদ্ধ খুবই কম, বিশেষ করে টিএসপি সারের বরাদ্ধটা খুবই কম। মূলত কৃষকরা কৃষি অফিসের নিয়ম অনুযায়ীর চেয়ে বেশি করে জমিতে সার ব্যবহার করাই এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে । এই সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত উপবরাদ্ধ দিলে কিছুটা সংকট কেটে উঠবে বলেও জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম দৈনিক অধিকারকে জানান, কৃষকরা জমিতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সার ব্যবহার করছে। আর যারা সরকার নির্ধারিত দামের বেশি দামে সার বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যদিও কোথাও কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শোনা যায়নি বা দেখা যায়নি, শুধু দায় এড়ানো বক্তব্য দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ।
কৃষকদের দিকে বিবেচনা করে সরকার দ্রুত সারের বরাদ্ধ বৃদ্ধি করবেন সেই সাথে বাজার পরিদর্শনের ব্যবস্থা করবেন এমনই প্রত্যাশা এ জেলার কৃষকদের।
কৃষি বিভাগ সার ব্যবহার করতে বলছে প্রতি বিঘা (৩৩) শতাংশে ইউরিয়া ৩০, ডিএপি ২০ কেজি, এমওপি ৩৩ কেজি, জিপসাম ১৫ কেজি, জিংক বা দস্তা ২ কেজি, বোরন ১ কেজি, ম্যাগনেশিয়াম ১.৫০ কেজি, গোবর ৫০০ কেজি।
কৃষকরা ব্যবহার করছে প্রতি বিঘা ৩৩ শতাংশে ইউরিয়া ৩০ থেকে ৪০ কেজি, টিএসপি ৫০থেকে ৮০ কেজি, ডিএপি ৫০ থেকে ৬০ কেজি, এমওপি ৫০ থেকে ১০০কেজি।
আপনার মতামত লিখুন :