নির্বাচন উপযোগী সব ইউনিয়ন পরিষদের ভোট আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে শেষ করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এ নির্বাচন ডিসেম্বর পর্যন্ত গড়াতে পারে। চার ধাপে এসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। চলতি মাসের শেষ দিকে বা অক্টোবরের শুরুতে এসব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় কমিশনের ৮৫তম সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়েছে। ওই সভায় প্রথম ধাপের স্থগিত ১৬৩টি ইউনিয়ন পরিষদ ও সপ্তম ধাপের স্থগিত ৯টি পৌরসভার ভোটের তারিখ ঘোষণার সিদ্ধান্ত হতে পারে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, স্থগিত পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সেপ্টেম্বর মাসে করতে চাই। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর- যতদিন লাগে করব। আমাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন করার পরিকল্পনা আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কমিশন সভায় নির্বাচন উপযোগী ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদের সাধারণ ও উপনির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরা হবে। কমিশন আলোচনা করে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৪ ফেব্র“য়ারি শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচনগুলো শেষ করতে চান। এ নিয়ে কমিশনাররা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনাও করেছেন।
জানা গেছে, এর আগে ২৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত কমিশনের ৮৪তম সভায় ডিসেম্বরের মধ্যে সব ধরনের নির্বাচন শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছিল ইসি। তবে ওই সময় আরও এগিয়ে আনা হচ্ছে। প্রধানত দুটি কারণে নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন উপযোগী তিন হাজারের বেশি ইউপিতে ভোট করতে চায় ইসি। কারণগুলো হচ্ছে-এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এবং জেলা পরিষদ নির্বাচন। মধ্য নভেম্বর এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং শিক্ষকদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ বিবেচনায় ওইসব পরীক্ষা শুরুর আগেই ইউপি নির্বাচন করতে চায় ইসি। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পরই জেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজন করবে এ কমিশন। নভেম্বরে ইউনিয়ন পরিষদ ভোট শেষ হওয়ার পর বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের নামের গেজেট প্রকাশ করা হবে। ওই জনপ্রতিনিধিদের নিয়েই জেলা পরিষদের ভোটার তালিকা তৈরি করা হবে। সেই ভোটার তালিকার ভিত্তিতে আগামী জানুয়ারি মাসে জেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর ৬১ জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
আরও জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন নির্বাচন আটকে থাকায় এবার নির্বাচনগুলোর সময়ের ব্যবধান ও ধাপ সংখ্যাও কমানো হচ্ছে। বাকি ইউনিয়ন পরিষদগুলো চার ধাপে ভোট করতে চায় ইসি। প্রত্যেক ধাপে প্রতিটি জেলার এক-চতুর্থাংশ ইউনিয়নে ভোট নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটি ধাপের সময়ের ব্যবধান হাতেগোনা কয়েকদিন রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। আজকে অনুষ্ঠেয় কমিশন বৈঠকে ইউনয়ন পরিষদগুলোর নির্বাচনের সময়সীমা চূড়ান্ত করা হতে পারে। ওই সময়সীমা মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে। নির্বাচন কর্মকর্তারা স্থানীয়ভাবে তফসিল ঘোষণা করবেন। ইউনিয়ন পরিষদের ফাঁকে ফাঁকে পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনগুলোর যেসব ওয়ার্ড শূন্য রয়েছে সেগুলোরও ভোটের আয়োজন করতে যাচ্ছে ইসি।
বর্তমানে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে একটি করে ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের পদ শূন্য আছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ, মাগুরা জেলার মাগুরা, পাবনার ভাঙ্গুড়া ও সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার একটি করে ওয়ার্ডও শূন্য। একইভাবে ৩৫টি পৌরসভা, ১৩টি উপজেলা ও ১৯টি জেলা পরিষদের বিভিন্ন পদে শূন্য আসন রয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
সূত্র জানায়, প্রথম ধাপের স্থগিত ১৬৩টি ইউনিয়ন পরিষদ ও সপ্তম ধাপের স্থগিত ৯টি পৌরসভার ভোটের তারিখ আজ ঘোষণা করতে পারে ইসি। সেপ্টম্বরের তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহে এসব নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা জানুয়ারির প্রথম দিকে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এছাড়া কুমিল্লা-৭ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল আজ ঘোষণা করা হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :