কনস্টেবল নিয়োগে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে সাবেক এসপিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে দুদকের চার্জশিট দাখিল
- আপডেট সময় : ১১:৪৫:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪ ১৪১ বার পড়া হয়েছে
কনস্টেবল নিয়োগে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে সাবেক এসপিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে দুদকের চার্জশিট দাখিল
মাদারীপুরের সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) সুব্রত কুমার হালদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে কনস্টেবল নিয়োগে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে দুদক। আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম।বৃহস্পতিবার চার্জশিটটি গ্রহণ করেছেন মাদারীপুর জেলা দায়রা জজ আদালতের সেশন সহকারী। দুদকের উপ-পরিচালক মো.আকতারুজ্জামান জানান, গত বছরের (২০২৩) ৫ জুলাই মাদারীপুরের সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) সুব্রত কুমার হালদারসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল দুদক। মামলার এজাহারে তাদের বিরুদ্ধে কনস্টেবল নিয়োগে এক কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ আনা হয়। মাদারীপুরের সাবেক এসপি সুব্রত কুমার হালদার (বর্তমানে পলাতক), কনস্টেবল (সাময়িক বরখাস্ত ও পলাতক) মো. নুরুজ্জামান সুমন, কনস্টেবল (সাময়িক বরখাস্ত) জাহিদুল ইসলাম, মাদারীপুর জেলা পুলিশ হাসপাতালের সাবেক মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পিয়াস বালা এবং মাদারীপুরের সাবেক টিএসআই (টাউন সাব-ইন্সপেক্টর) গোলাম রহমানকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়।এর আগে, মামলার এজাহারে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ৬ হাজার ৮০০ জন পুরুষ এবং ২ হাজার ৮৮০ জন নারীসহ মোট ৯ হাজার ৬৮০ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের জন্য ২০১৯ সালের ২৮ মে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা রেঞ্জের অধীনে মাদারীপুর জেলায় সাধারণ পুরুষ ১৬ জন ও সাধারণ নারী তিনজন এবং বিশেষ কোটায় ১৫ জন পুরুষ ও ২০ জন নারীসহ মোট ৫৪ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়। ওই নিয়োগ কমিটির সভাপতি মাদারীপুর জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার। অপর দুই সদস্য হলেন, মাদারীপুর জেলার তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাজমুল ইসলাম ও গোপালগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।মাদারীপুর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে ২০১৯ সালের ২২ জুন পুলিশ সদর দফতরের এআইজির (রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ক্যারিয়ার প্লানিং-২) কাছে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীর সংখ্যাসহ কোটাভিত্তিক উত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যা ছকের মাধ্যমে পাঠানো হয়। ছক অনুযায়ী মাদারীপুর জেলা থেকে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রথম পরীক্ষা বা প্রথম ধাপ হিসেবে ২০১৯ সালের ২২ জুন শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় পুরুষ অংশগ্রহণকারী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৮৩৫ জন। তাদের মধ্যে ৩০৫ জন উত্তীর্ণ হন। এছাড়া নারী অংশগ্রহণকারী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১৫৮ জন। যাদের মধ্যে ৫৯ জন উত্তীর্ণ হন। মাদারীপুর জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষায় মোট অংশগ্রহণকারী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৯৯৩। যাদের মধ্যে ৩৬৪ জন শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
মাদারীপুর জেলা থেকে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় পরীক্ষা বা দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে একই বছরের ২৩ জুন লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষার ইংরেজি অংশের প্রশ্ন (প্রশ্নপত্রের ৪ থেকে ৫নং ক্রমিকের প্রশ্ন) প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন মাদারীপুর জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার। যাদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করা হয়েছে তাদের পরীক্ষার খাতায় বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। সেই সব খাতায় অতিরিক্ত নম্বর প্রদান করেন এসপি সুব্রত।
ওই বছরের ২৬ জুন মাদারীপুর জেলা থেকে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ মে-২০১৯-এর চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়। চূড়ান্ত ফলের ভিত্তিতে ৫৪ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এই নিয়োগ চলাকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অবৈধ ঘুষ লেনদেনের ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছয়টি ধাপে জব্দ করা হয়। বিষয়টি পুলিশ সদর দফতর প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে সত্যতা থাকায় আদালতের মাধ্যমে সেটা দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠায়। দুদকের অনুসন্ধান এবং তদন্তে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে দুদক এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের তথ্য প্রমাণ পায়। দুদকের এই মামলায় পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, একটি বেসরকারি ব্যাংকের ম্যানেজারসহ ৫০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন মাদারীপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আকতারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘ তদন্তের পর সাবেক এসপিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।