বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়ানের লামচরী ৮ ও ৯ নং ওয়াডের প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তা এখন মৃত্যুর ফাঁদ।
বছরের পর যুগ বছর দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হচ্ছে ঐগ্রামের বাসিন্দাদের। এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নজর নেই বলেই অভিযোগ করেন লামচরীর হাজার হাজার বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ সারা দেশে উন্নয়ন হলেও চরবাড়িয়ার লামচরী এলাকায় কোন ধরনের উন্নয়ন হচ্ছে প্রায় এক যুগ ধরে।
নাম প্রকাচ্ছে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, নির্বাচন এলেই চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা বলেন, আমি নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে লামচরী এলাকায় একটি মডেল এলাকা হিসেবে গড়ে তুলবো। তিনি আরো বলেন আমাদের মডেল এলাকার এই চিত্র। এখানে প্রতিদিনই ঘটছে দূর্ঘটনা। আহত হচ্ছে দিন খেটে খাওয়া আমার মত অনেক মানুষ।
আমরা এলাকাবাসী বেশ কয়েক বার রাস্তাটি চেয়ারম্যান এবং মেম্বারকে মেরামত করা কথা বলছি কিন্তু তারা বিষয়টি নিয়ে কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না।
প্রতিনিয়তই এই সড়ক দিয়ে হাজার হাজার গ্রামবাসী চলাচল করে। ভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মটরসাইকেল, ট্রলিসহ নানা ধরনের ছোটখাটো যানবাহন চলাচল করলেও মাটির রাস্তা হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে এলেই সড়কটি একেবারে কর্দমাক্ত হয়ে নদীতে পরিনিত হয় ।
তখন চলাচল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন কোনো যানবাহন তো দূরের কথা একটি মানুষ চালচল করতে পারে না । অনেক সময় রাস্তায় নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় সপ্তাখানেক ধরে নদী বেশি পানি থাকায় জোয়ারের পানিতে নিম্ন আঞ্চলসহ এই রাস্তাটি পানিতে তলিয়ে যায়। কিছু সময় পানি না থাকলেও প্রায় সময়ই রাস্তাটি নদীতে পরিনত হয়।
স্থানীয় সাহিদা বেগম বলেন, কেউ হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ভ্যান গাড়ী অথবা এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিতে নিতে সে পথে বসে মারা যায় এরকমের একাধিক ঘটনা রয়েছে। প্রতিবেদক তার কাছে কারন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমাদের রাস্ত কত সুন্দর দেখতে পার না। জোয়ারের সময় বা বৃষ্টি সময় এখানে এলেই দেখতে পাবেন কি সুন্দর করে রাস্তায় নৌকা চলে।
একজন অসুস্থ রোগীকে যদি প্রায় আধাঘন্টা কোলে করে হেটে নিয়ে যেতে হয় পাতা রাস্তায়। তাহলে তার কি অবস্থা হয় তা বুঝেন।
গতকাল দেখা গেছে একটি মাহেন্দ্র কয়েকটি চালের বস্তাসহ বিভিন্ন ধরনের মুদির মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার মধ্যে কাদায় মাহেন্দ্রটি আটকে গেছে। পরে সেখানে চার-পাঁচজন লোক প্রায় আধাঘন্টা চেষ্টা করে ধাক্কা দিয়ে মাহেন্দ্রাটি তুলে।
মাহেন্দ্র ড্রাইভার কবির জানান, এই বর্ষার পুরো মৌসুমে ট্রলি বা কোনো যানবাহন মালামাল নিয়ে এখান থেকে যেতে পারছেনা।
টানা তিন থেকে চার দিন রোদের পর সড়কটি একটু শুকালে দুর্ভোগ থেকেই যায় লামচরীবাসীর কপালে।
তবুও খুব কষ্ট করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাজার হাজার মানুষ।
এদিকে লামচরি এলাকার মোকছেদা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,ভাই আমার মেয়ের ডেলিভারি হবে। হঠাং করে তার ব্যাথা হওয়ার কারনে আমি তাকে বরিশাল মেডিকেলের উদ্দেশে নিয়ে রওনা দেই কিন্তু রাস্তা ভালো না থাকার কারনে অনেক কষ্ট করে তাকে কোলে করে নিয়ে যেতে হয়েছে।
তিনি আরো বলেন কোন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। গ্রামে বিনা চিকিৎসায় মরা ছাড়া আমাদের আর কোনো গতি নেই।
তবে একাধিক স্থানীয় গর্নমান্যবাক্তিরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের প্রকল্প গ্রামাঞ্চলে পাকা রাস্তা করার ঘোষনা দিয়েছেন কিন্ত আমাদের এই সড়কটি সংস্কার বা পাকা করা একযুগেও আজও। তার ডিজিটাল বাংলাদেশের গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসছেনা জনপ্রতিনিধিরা।
উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগার কারনে লামচরীবাসী পিছিয়ে রয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
অবহেলিত এলাকাটিতে রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উচ্চবিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা,সহ অনেকের ছেলে মেয়েদের প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন জড়িয়ে।
দেখা গেছে রাস্তাটির কারণে ছোট ছোট শিশুরা সময়মতো স্কুলেও যেতে পারে না। এবং কি চাকরিজীবি ও দিন খেটে খাওয়া মানুষ গুলো তাদের কর্মস্থলে সময় মত যেতে পারছেনা রাস্তাটি থেকে গাড়ী চলাচল করতে না পাড়ায়।
এক কথায় বলা যায় লামচরিবাসী এখন পুরোপুরি অসহায়। তবে সড়কের সংস্কার কাজ দ্রুত শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা কোনো এক অজানা কারণে শুরু হচ্ছে না।
অল্প বৃষ্টি হলেই সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গ্রামবাসী জানেনা তারা আর কতদিন এভোগান্তি প্রহাতে হবে তাদের।
উল্লেখ্য, লামচরী প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়ক কয়েক বছর আগে কীর্তনখোলা নদী ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই এলাকায় দুটি ইটভাটার মালিকদের নিজ অর্থয়নে ও এলাকাবাসীর সহায়তায় সাবেক রাস্তার পাশ দিয়ে আরেকটি সংযোগ তৈরি করা হয় চলাচল করার জন্য।
কিন্ত ৪/৫ দিন আগে জোয়ারের পানিতে তলিয়েছে সড়কটি। কিন্ত পানি নেমে গেলেও পানির স্রোতে রাস্তার ইটবালু ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যাওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে রাস্তাটি।
সড়ক সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয়ন চেয়ারম্যান মোঃ মাহতাব হোসেন সুরুজ বলেন, এই রাস্তাটি বেহাল অবস্থা সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। খুব শিগরই সড়কটির কাজ হবে বলে আশা করেন তিনি।
এই বিষয়ে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মুনিবুর রহমান জানান, তালতলী থেকে লামচরী সড়কের কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে।
তিনি আরো বলেন এই এলাকার মানুষ বর্তমানে অনেক দূভোগের মধ্যে রয়েছে বলে জানতে পারেন তিনি। তবে তিনি কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে কিছু দিনের মধ্যে সমাধান করার চেষ্টা করবে।
আপনার মতামত লিখুন :