ঘূর্ণিঝড় অশনি: দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে কয়রাবাসী - সময়কাল

ঘূর্ণিঝড় অশনি: দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে কয়রাবাসী


admin-abbas প্রকাশের সময় : মে ১০, ২০২২, ৯:১৪ পূর্বাহ্ণ /
ঘূর্ণিঝড় অশনি: দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে কয়রাবাসী
ঘূর্ণিঝড় অশনি ধেয়ে আসার খবরে দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে খুলনার কয়রা উপজেলার মানুষ। এরই মধ্যে বেড়িবাঁধের বাইরে ও বাঁধের কাছাকাছি বসবাসরতরা আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। ঘূর্ণিঝড় আইলা, আম্পান ও ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলোর কাজ এখনও চলমান।

কয়রা উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলোর মধ্যে রয়েছে— সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চ ঘাট, মদিনাবাদ তফসিল অফিসের সামনে হতে হামকুড়ার গোড়া, মহারাজপুর ইউনিয়নের সুতির অফিস ও দশালিয়া,  দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়াপদা বাঁধ গাববুনিয়া, মাটিয়াভাঙ্গা (কোবাদক ফরেস্ট অফিস থেকে ঘড়িলাল বাজার) আংটিহারা (স্লুইচ গেট থেকে পুলিশ ফাঁড়ি), পাতাখালি (খাশিটানা বাঁধ থেকে জোড়শিং বাজার) উত্তর বেদকাশির গাতিরঘেরী।

কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী-তীরবর্তী যেসব এলাকায় এখনও টেকসই বেড়িবাঁধ হয়নি, সে সব গ্রামে বসবাসকারী পরিবারগুলোর মাঝে ‘অশনি’ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। তাদের অধিকাংশেরই নেই দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি-ঘর। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর অনেকেই এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। এর মধ্যে আরেকটি দুর্যোগের সতর্ক সংকেত তাদের ভাবিয়ে তুলেছে।

জোড়শিং গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর গাজী বলেন, সুপার সাইক্লোন আইলায় তার ঘর ভেঙে নদীতে বিলীন হয়। এরপর নতুন করে ঘর বাঁধেন তিনি। সেটিও নদী ভাঙনে বিলীন হয়। তার বাড়ির সামনে দিয়ে আবারও ভাঙন লেগেছে। যেকোন সময় জলোচ্ছ্বাসে সেখানে ভাঙন দেখা দিতে পারে। যে কারণে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিনি। এবার ভাঙলে ভিটে ছেড়ে চলে যেতে হবে।

অপর বাসিন্দা আছাদুল হক বলেন, নদীতে জোয়ার বেশি হলে রাস্তা ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করবে। ২ নম্বর সংকেত চলছে। জোড়শিং ট্যাকের মাথা পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে কাজ না করলে ‘অশনি’র আঘাতে এখান থেকে ভাঙন দেখা দিতে পারে। এতে হাজার হাজার বিঘা মাছের ঘের, ফসলি জমি ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হবে।

উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, উপকূলের মানুষের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ। সেটি পাশ হয়েছে। জরুরি কাজ শুরু করা দরকার। তবে আম্পান ও ইয়াসে ৬০’র দশকের জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ উন্নয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যাপক কাজ করেছে। কিছু এলাকায় কাজ না করায় আতঙ্ক বেড়েছে। বিশেষ করে ঝুঁকির মুখে রয়েছেন দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙ্গা, কয়রা সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাট ও মদিনাবাদ তফসিল অফিসের সামনে হতে হামকুড়ার গড়া, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া ও সুতির কোণা।

কয়রা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় অশনি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

কয়রা-পাইকগাছার সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, টেকসই বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করার জন্য সব সময় লেগে আছি। ঘূর্ণিঝড় অশনি উপলক্ষে ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কয়রার ১১৮টি আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রেখে মানুষের কল্যাণে দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করার প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি এড়াতে কাজ করবে সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সিপিপি, বেসরকারি এনজিও’র স্বেচ্ছাসেবকরা।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (সেকশন-২) নির্বাহী প্রকৌশলী শামিম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, আম্পান ও ইয়াসের পর থেকে কয়রা উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে সংস্কার কাজ চলছে।

ব্রেকিং নিউজ