কোভিডের টিকা নিয়েও সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার বিকেলে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখলাম, এই কোভিডেও তারা কীভাবে পুরো বিষয়টাকে উদাসীনতা, অযোগ্যতা, ব্যর্থতা দিয়ে জনগণের জীবন-জীবিকাকে বিপন্ন করে ফেলেছে। এখন মানুষের সঙ্গে এতো বেশি তারা প্রতারণা করে, এতো মিথ্যা কথা বলে, এতো ভাঁওতাবাজি করে। দেখেন- এখন পর্যন্ত টিকাই সংগ্রহ হলো না অথচ তারা বলছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেবে। এগুলো জাতিকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া আর কিছু নয়।
‘এই সরকার একটা জিনিস খুব ভালো পারে, অবলীলায় গোয়েবলসীয় পদ্ধতিতে মিথ্যা প্রচার করতে থাকে এবং সেই মিথ্যাকে সত্য প্রমাণিত করতে থাকে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। আপনারা দেখেছেন যে, ভিখারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন সন্ত্রাসী দলবাজ নারীকে অধ্যক্ষ করা হয়েছে। আমরা দেখলাম, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদেরকে উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হলো তারা দুর্নীতি করছে। এভাবে তারা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। এই করোনার অজুহাতে তারা শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছে।’
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তো পুরোপুরি ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ব্যাংকিং সেক্টরকে গিলে ফেলেছে। তারা আমাদের সমস্ত অর্জনগুলোকে ধ্বংস করেছে।’
বর্তমান সংকট উত্তরণে আন্দোলনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই। সেজন্য আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি বন্দি হয়ে আছেন তাদের নেতৃত্বে আজকে দল সংগঠিত হচ্ছে। আমাদেরকে আন্দোলনে যেতে হবে এবং এই ভয়াবহ যে দানব আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে, সেই দানবকে সরিয়ে দিতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মানুষকে জাগাতে হবে, তাদেরকে নতুন স্বপ্ন দেখাতে হবে। মানুষকে সেই সুদিনের গান শুনাতে হবে যেন তারা জেগে ওঠেন। তাদেরকে সেই পথ দেখাতে হবে।’
‘কোভিডকে পুঁজি করে ওরা লুট করেছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস পৃথিবীর সমস্ত মানুষের জীবনকে এলোমেলো করে দিচ্ছে বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকাকে বিপন্ন করে ফেলেছে সেই সময় আওয়ামী লীগ সরকার সেই কোভিডকে পুঁজি করে জনগণকে লুট করছে। তারা রাষ্ট্রের সম্পদ লুট করছে।’
‘যে কষ্টার্জিত অর্থ ট্যাক্স হিসেবে মানুষ দেয়, আমাদের প্রবাসীরা বিদেশে গিয়ে যে রেমিট্যান্স পাঠায়, আমাদের শ্রমিকরা গার্মেন্টসে কাজ করে যে অর্থ উপার্জন করে সেই অর্থ তারা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এটা আমার কথা নয়, এটা আপনি যেকোনো অর্থনীতিবিদ, পত্রপত্রিকা তারাও পরিষ্কার করে লিখছে এখন লুটের রাজত্ব চলছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আওয়ামী লীগ আসলে চরিত্রগতভাবে একটা লুটেরা শ্রেণির প্রতিনিধি।’
বিএনপি মহাসচিব প্রয়াত তরুণ নেতা শফিউল বারীর দলের প্রতি কমিটমেন্ট ও তার সাংগঠনিক দক্ষতার প্রশংসা করে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন তিনি।
স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত বছর করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাবু মারা যান।
স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরফত আলী সপু, একেএম ওয়াহিদুজ্জামান অ্যাপেলো, এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজাম, প্রয়াত শফিউল বারী বাবুর সহধর্মিণী বিথীকা বিনতে হোসাইন, স্বেচ্ছাসেবক দলের গোলাম সারোয়ার, এসএম আসাদুজ্জামান নেসার, আনু মোহাম্মদ শামীম, ইয়াসীন আলী, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরেজ জামান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আপনার মতামত লিখুন :