কক্সবাজারের রামুতে দেড়শ টাকা চুরির অভিযোগে দুই শিশুকে মুরগির খাঁচায় বন্দি করে ইলেকট্রিক শক ও জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতন করেছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) রামু উপজেলার পাহাড়ি জনপদ ঈদগড় ইউনিয়নের ঈদগড় বাজারের একটি মুরগির দোকানে এ ঘটনা ঘটে। সোমবার (৫ জুলাই) ওই ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।
অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতার নাম রিফাত করিম (৩২)। তিনি ঈদগড় ৪নং ওয়ার্ডের মো. শরিফ পাড়ার নেজাম উদ্দিনের ছেলে।
নির্যাতনের শিকার দুই শিশু ঈদগড় ৪নং ওয়ার্ডের মো. শরিফ পাড়া এলাকার প্রতিবন্ধী মো. নুরুল আলম ছেলে সোহেল (১০) ও রশিদ আহমদের ছেলে ইব্রাহিম (১০)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত কোনো আইনি সহায়তা পাননি ভুক্তভোগীরা। তবে পুলিশের দাবি, মামলা করতে রাজি হচ্ছে না ভুক্তভোগীর পরিবার।
নির্যাতনের একটি ভিডিও জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দুই শিশুকে মুরগির খাঁচার ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে সিটকিনি লাগেয়ে দেয়া হচ্ছে।
নির্যাতনের শিকার শিশু ইব্রাহিম জানায়, তাদেরকে খাঁচায় বন্দি রেখে শরীরের বিভিন্ন অংশে ইলেকট্রিক শক ও জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দেন আওয়ামী লীগ নেতা রিফাত।
এ বিষয়ে ঈদগড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ ভুট্টো জানান, ঈদগড় বাজারে আওয়ামী লীগ নেতা রিফাত করিমের একটা মুরগির দোকান আছে। সেখানে পেটের দায়ে দুবেলা ভাতের বিনিমিয়ে কাজ করে শিশু সোহেল। ওই দোকান থেকে মাত্র দেড়শ টাকা চুরির অভিযোগে শিশু সোহেল ও তার বন্ধু ইব্রাহিমকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা ১০ ঘণ্টা মুরগির খাঁচায় বন্দি রেখে শত শত মানুষের সামনে নির্যাতন করেন রিফাত।
তিনি জানান, এক পর্যায়ে স্থানীয় কয়েকজন শিশুদের ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলে তাদের ওপরে হামলা চালান অভিযুক্ত ও তার লোকজন।
অভিযোগ স্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা রিফাত করিম বলেন, ‘শিশু সোহেল খুব গরিব ঘরের সন্তান। তার মা বোবা আর বাবা বধির। এ কারণে সে আমার দোকানে ব্যবসা শিখতে চাওয়ায় আমি তাকে সুযোগ করে দিয়েছি। কিন্তু সে দোকান থেকে টাকা চুরি করে তার চাতাতো ভাই ইব্রাহিমকে জমা দিয়েছে বলে আমার সন্দেহ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকে ধরে এনে খাঁচায় ঢুকিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। এক পর্যায়ে সোহেল তিনশ টাকা চুরি করেছে বলে স্বীকার করে।’
শিশুদের ইলেকট্রিক শক ও জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়ার কথা অস্বীকার করে রিফাত বলেন, ‘ওইদিন আমাকে কয়েকজন মিলে মারধর করে। এজন্য আমি এখন হাসপাতালে ভর্তি আছি।’
এদিকে, নির্যাতিত শিশুদের পক্ষ থেকে মামলা করার চেষ্টা করা হলে আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী নেতার হস্তক্ষেপের কারণে মামলা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘শিশু নির্যাতনের ভিডিও ক্লিপ দেখে আমি স্বপ্রণোদিতভাবে একজন অফিসারকে ওই এলাকায় পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু নির্যাতিত শিশুদের পরিবার কিছুতেই মামলা করতে রাজি হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, নির্যাতনকারী আওয়ামী লীগ নেতা রিফাতকে মারধর করা হয়েছে দাবি করে একটি মামলা করার চেষ্টা করেন। তখন আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতাম না। পরে বিষয়টা জানতে পারি। এসময় সরকারদলীয় দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির হস্তক্ষেপে পক্ষে-বিপক্ষে দুটি মামলা নেয়ার কথা বলা হয় বলে স্বীকার করেন ওসি।
আপনার মতামত লিখুন :