ঢাকা ০১:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুন্সিগঞ্জ টার্মিনালে তরুণীদের প্রকাশ্যে মারধর করায় সেই যুবকের আত্মসমর্পণ

ওসমান গনি মুন্সিগঞ্জ থেকে।
  • আপডেট সময় : ১০:০৭:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫ ৭৮ বার পড়া হয়েছে
সময়কাল এর সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মুন্সিগঞ্জ টার্মিনালে তরুণীদের প্রকাশ্যে মারধর করায় সেই যুবকের আত্মসমর্পণ
ওসমান গনি
মুন্সিগঞ্জ থেকে।
মুন্সীগঞ্জ টার্মিনালে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চে দুই তরুণীকে মারধর করার অভিযোগে অভিযুক্ত যুবক নেহাল আহমেদ জিহাদ থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে শুক্রবার (৯ মে) দিবাগত রাত ৯টার দিকে ঢাকাগামী এমভি ক্যাপ্টেন নামের লঞ্চে মারামারির এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, এক যুবক লঞ্চের একেবারে সামনে দুই নারীকে বেল্ট দিয়ে প্রকাশ্যে পেটাচ্ছে। তাদের বয়স ১৫-১৭ হবে। আর সেই ভিডিও ধারণ করছে সেখানকার শতাধিক মানুষ।

অভিযুক্ত যুবক বলেন, শতশত মানুষ ছিলো। আমি যদি কয়েকটি আঘাত দিয়ে সবাইকে শান্ত না করতাম, তাহলে হয়তো মেয়েগুলোর সাথে আরও খারাপ কিছু হতো। তাদের কয়েকটি মোবাইলও নিয়ে গিয়েছিল। সেগুলো আমি উদ্ধার করেছি।

তাদের দু’জনকে মারধর করা ঠিক হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করতেই ভাই হিসাবে এমন কাজ করছি। এর জন্য দুঃখ প্রকাশও করেন তিনি।

এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, লালমোহন থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরছিল এমভি ক্যাপ্টেন নামের লঞ্চটি। যারমধ্যে একদল তরুণ-তরুণী পার্টি করছিল। রাত সাড়ে ৭টার দিকে লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে যাত্রী ওঠানামার জন্য নোঙর করলে তরুণ-তরুণীদের বিরুদ্ধে মাদক ও অশ্লীলতার অভিযোগ পেয়ে লঞ্চে অভিযান চালায় স্থানীয়রা। লঞ্চটির তৃতীয় তলার কয়েকটি কক্ষ থেকে বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয় সেসময়। এসময় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে উত্তেজিত হয়ে ওঠে স্থানীয় জনতা। ভাঙচুর করে লঞ্চের কিছু জানালা। মারধর করা হয় দুই তরুণীসহ কয়েকজনকে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে ছেড়ে যায় লঞ্চটি।

স্থানীয় কয়েকজনের অভিযোগ, ইয়াবা আর গাঁজা সেবন চলছিল লঞ্চটিতে; যার কারণে তারা সেখানে যায়। পরে একটি কক্ষে ছেলেমেয়েদের একসাথে নেশাদ্রব্য সেবন অবস্থায় পায়। এ নিয়েই হুলুস্থুল বাধে।

খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেখানে ছুটে যান থানা পুলিশ, নৌপুলিশ ও বিআইডব্রিউটিএর লোকজন। পরে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন এবং পিকনিকের লঞ্চটিকে ঢাকার সদরঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যেতে তারা সহযোগিতা করেন।

লঞ্চে আসা শান্ত নামের এক তরুণী জানান, রাজধানীর কামরাঙ্গীচর থেকে তারা এসেছে, সকলে বন্ধু-বান্ধুবী। মুন্সীগঞ্জ ঘাটে ভিরলে মারামারির ঘটনা ঘটে।

মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফিরোজ কবির জানান, পিকনিকের লোকজন দাবি করেছেন তাদের মারপিট ছাড়াও মোবাইলসহ নানা কিছু নিয়ে গেছে। তবে তারা পিকনিকের লোকজনকে গন্তব্য পৌঁছে দিয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল আলম জানান, হট্টগোলের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করে। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে জিডি করে তদন্ত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নেহাল আহমেদ জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

মুন্সিগঞ্জ টার্মিনালে তরুণীদের প্রকাশ্যে মারধর করায় সেই যুবকের আত্মসমর্পণ

আপডেট সময় : ১০:০৭:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

মুন্সিগঞ্জ টার্মিনালে তরুণীদের প্রকাশ্যে মারধর করায় সেই যুবকের আত্মসমর্পণ
ওসমান গনি
মুন্সিগঞ্জ থেকে।
মুন্সীগঞ্জ টার্মিনালে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চে দুই তরুণীকে মারধর করার অভিযোগে অভিযুক্ত যুবক নেহাল আহমেদ জিহাদ থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে শুক্রবার (৯ মে) দিবাগত রাত ৯টার দিকে ঢাকাগামী এমভি ক্যাপ্টেন নামের লঞ্চে মারামারির এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, এক যুবক লঞ্চের একেবারে সামনে দুই নারীকে বেল্ট দিয়ে প্রকাশ্যে পেটাচ্ছে। তাদের বয়স ১৫-১৭ হবে। আর সেই ভিডিও ধারণ করছে সেখানকার শতাধিক মানুষ।

অভিযুক্ত যুবক বলেন, শতশত মানুষ ছিলো। আমি যদি কয়েকটি আঘাত দিয়ে সবাইকে শান্ত না করতাম, তাহলে হয়তো মেয়েগুলোর সাথে আরও খারাপ কিছু হতো। তাদের কয়েকটি মোবাইলও নিয়ে গিয়েছিল। সেগুলো আমি উদ্ধার করেছি।

তাদের দু’জনকে মারধর করা ঠিক হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করতেই ভাই হিসাবে এমন কাজ করছি। এর জন্য দুঃখ প্রকাশও করেন তিনি।

এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, লালমোহন থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরছিল এমভি ক্যাপ্টেন নামের লঞ্চটি। যারমধ্যে একদল তরুণ-তরুণী পার্টি করছিল। রাত সাড়ে ৭টার দিকে লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে যাত্রী ওঠানামার জন্য নোঙর করলে তরুণ-তরুণীদের বিরুদ্ধে মাদক ও অশ্লীলতার অভিযোগ পেয়ে লঞ্চে অভিযান চালায় স্থানীয়রা। লঞ্চটির তৃতীয় তলার কয়েকটি কক্ষ থেকে বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয় সেসময়। এসময় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে উত্তেজিত হয়ে ওঠে স্থানীয় জনতা। ভাঙচুর করে লঞ্চের কিছু জানালা। মারধর করা হয় দুই তরুণীসহ কয়েকজনকে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে ছেড়ে যায় লঞ্চটি।

স্থানীয় কয়েকজনের অভিযোগ, ইয়াবা আর গাঁজা সেবন চলছিল লঞ্চটিতে; যার কারণে তারা সেখানে যায়। পরে একটি কক্ষে ছেলেমেয়েদের একসাথে নেশাদ্রব্য সেবন অবস্থায় পায়। এ নিয়েই হুলুস্থুল বাধে।

খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেখানে ছুটে যান থানা পুলিশ, নৌপুলিশ ও বিআইডব্রিউটিএর লোকজন। পরে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন এবং পিকনিকের লঞ্চটিকে ঢাকার সদরঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যেতে তারা সহযোগিতা করেন।

লঞ্চে আসা শান্ত নামের এক তরুণী জানান, রাজধানীর কামরাঙ্গীচর থেকে তারা এসেছে, সকলে বন্ধু-বান্ধুবী। মুন্সীগঞ্জ ঘাটে ভিরলে মারামারির ঘটনা ঘটে।

মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফিরোজ কবির জানান, পিকনিকের লোকজন দাবি করেছেন তাদের মারপিট ছাড়াও মোবাইলসহ নানা কিছু নিয়ে গেছে। তবে তারা পিকনিকের লোকজনকে গন্তব্য পৌঁছে দিয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল আলম জানান, হট্টগোলের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করে। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে জিডি করে তদন্ত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নেহাল আহমেদ জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে।