রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তেজনা দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে। যুদ্ধের ময়দানের মতোই পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে রাশিয়া ও পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক যুদ্ধ। এরই ধারবাহিকতায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্যাজপ্রমের ইউরোপীয় সহায়ক সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মস্কো।
মূলত ইউক্রেন একটি প্রধান গ্যাস ট্রানজিট রুট বন্ধ করার একদিন পর এই সিদ্ধান্ত নেয় প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রশাসন। আর এতে করে বেকায়দায় পড়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। রুশ গ্যাসের বিকল্প নিশ্চিত করতে ইউরোপের ওপর চাপ আরও বেড়েছে।
শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপে গ্যাস সরবরাহে রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা এবং ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে যাওয়া রুশ গ্যাসলাইনগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র গ্যাস-সংকটে পড়েছে ইউরোপের দেশগুলো। ফলে গ্যাসের বিকল্প সরবরাহ নিশ্চিত করার চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি ইউরোপজুড়ে বেড়ে গেছে গ্যাসের দাম।
ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে মস্কো ইতোমধ্যে বুলগেরিয়া ও পোল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপের অন্য দেশগুলোও সামনে শীত মৌসুমের আগে নিজেদের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের মজুদ পূরণের জন্য কার্যত হন্যে হয়ে দৌড়াচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়া গত বুধবার রাতে গ্যাজপ্রমের ইউরোপীয় সহযোগী সংস্থাগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যার মধ্যে গ্যাজপ্রম জার্মানিয়াও রয়েছে। মূলত জ্বালানি সরবরাহ সুরক্ষিত রাখার জন্য জার্মানি গত মাসে ট্রাস্টিশিপের অধীনে এটি চালু করেছিল। এ ছাড়া ইউরোপে রুশ গ্যাস বহনকারী ইয়ামাল-ইউরোপ পাইপলাইনের পোলিশ অংশের মালিকের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মস্কো।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারি বাসভবন ও কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, এসব কোম্পানির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না বা তারা রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহের কাজে অংশ নিতে পারে না।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা এসব কোম্পানির নাম রাশিয়ার সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান মূলত সেসব দেশের যারা ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আরও ভালোভাবে বললে, এসব দেশের বেশিরভাগই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য।
ইউরোপে রাশিয়ার জ্বালানির শীর্ষ গ্রাহক জার্মানি। দেশটি বলছে, গ্যাজপ্রম জার্মানিয়ার কিছু সহযোগী সংস্থা নিষেধাজ্ঞার কারণে গ্যাস পাচ্ছে না। জার্মানির অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বুন্ডেস্ট্যাগকে বলেছেন, ‘গ্যাজপ্রম ও এর সহযোগী সংস্থাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মানে কিছু সহায়ক সংস্থা রাশিয়া থেকে আর গ্যাস পাচ্ছে না।’
এর আগে গত বুধবার ইউক্রেন হয়ে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহের প্রধান ট্রানজিট রুট বন্ধ করে দেয় কিয়েভ। ফলে ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে ইউরোপে রুশ গ্যাস সরবরাহ এক-চতুর্থাংশ কমে যায়।
রয়টার্স বলছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু করলেও এতদিন এই দেশটি ইউরোপে রুশ গ্যাস সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। তবে হামলা শুরুর প্রায় তিন মাস পর এবারই প্রথম ইউক্রেন এ ট্রানজিট রুটটি বন্ধের পদক্ষেপ নিল।
আপনার মতামত লিখুন :