সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে চ্যালেঞ্জের ভোট শনিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পুরো নির্বাচনী এলাকা। প্রতি ইউনিয়নে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে রয়েছে স্ট্রাইকিং ফোর্স।
সুষ্ঠু ভোটের শঙ্কা ও সব সংশয়কে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করতে বদ্ধপরিকর। যে কারণে দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের নেতৃত্বে শক্তিশালী একটি টিম পুরো নির্বাচন মনিটরিং করছে।
তারা জেলা, মহানগর ও উপজেলা আওয়ামী লীগকে দফায় দফায় নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচন দেখভাল করতে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুবই আস্থাভাজন প্রভাবশালী এক সংসদ সদস্যও সিলেটে এসেছেন।
অপরদিকে জাতীয় পার্টির মহাসিচব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় একটি টিম নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে সিলেটে অবস্থান করছে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলছেন, এই নির্বাচন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জের নির্বাচন। সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করে সরকারকে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। কারণ সুষ্ঠু ভোট না হওয়ায় নির্বাচনে অন্যান্য দলের অনীহা রয়েছে। এমনকি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে। ফলে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ করলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন, কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সরকার শুধু সরবরাহ করে। এক্ষেত্রে সব করণীয় কমিশন ঠিক করে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব যা বলছেন তা সঠিক নয়। নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে তদন্ত কমিশন, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনরায় নৌকার পক্ষে যাবে। এর আগে জনগণ নৌকার পক্ষে গণনায় দেয়ায় মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হয়েছে। সুতরাং নৌকা মার্কার কোনো বিকল্প নেই।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই ফলাফল নৌকার পক্ষে আসবে।
এদিকে শুক্রবার বিকালে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনসহ (ইভিএম) নির্বাচনী সব সরঞ্জাম প্রতিটি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। উপনির্বাচন উপলক্ষে সিলেটের তিন উপজেলা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপজেলা সদরের মোড়ে মোড়ে চেক পোস্ট বসিয়েছে। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি চালাচ্ছে। আধাসামরিক বাহিনী বিজিবি সশস্ত্র টহল দিচ্ছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা নির্বাচনী এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি ও চৌকি বসিয়েছে। দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায় ৩ দিন মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এই ৩ উপজেলায় বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার রাত ১২টা থেকে রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস, কার ও জিপ চলাচল বন্ধ থাকবে।
তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রার্থী, তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম শিথিল থাকবে। অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ ও গণমাধ্যমের কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই মাঠে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ভোটের পর রোববার পর্যন্ত তারা মাঠে দায়িত্ব পালন করবে।
সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদের জানান, সিলেট-৩ আসনের নির্বাচনের সময়ে সব অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোটগ্রহণের দিন কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে পুরো নির্বাচনী এলাকা।
সূত্র জানায়, ভোটকেন্দ্র্রে থাকবে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের ১৭ থেকে ১৮ জন সদস্য। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ থেকে ১৯ জন অস্ত্রধারী পুলিশ ও আনসার সদস্য থাকবে।
পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল ফোর্স ২১টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ১২টি, র্যাবের ১২টি টিম ও ১২ প্লাটুন বিজিবি ২ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাঠে কাজ করবে। ২১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। রিটার্নিং অফিসার কিংবা প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদামতো কেন্দ্রের ভেতরে ও বাহিরে এবং ভোট গণনার সময় শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের ১১ মার্চ এই আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়।
এই আসনে ৩ লাখ ৫২ হাজার ও ১৪৯টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। উপনির্বাচনে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিব (নৌকা), জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র সাবেক বিএনপি নেতা শফি আহমদ চৌধুরী (মোটরগাড়ি) ও কংগ্রেসের জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া (ডাব) প্রতীক।
অপরদিকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল কয়েছকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক মো.মজির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :