সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার (বাংলার বাঘ)। গেল এক মাসে এ বনের নদী-খালের পাড়ে বহুবার দেখা মিলেছে দুর্লভ এ প্রাণীটির।
বন থেকে ফেরা মানুষের মুখে মুখে বাঘের বাস্তব গল্প শুনে পর্যটকরা অগ্রহী হচ্ছেন ভ্রমণে। কখনো বনের ঝোপঝাড়ে আবার কখনো গাছের ডালে বা নোনা পানিতে সাঁতরে যাচ্ছে বাঘ। বাঘের এমন বিচরণ নিয়ে বনের জেলে-পেশাজীবী ও পর্যটকদের কৌতূহলের অন্ত নেই। ঈদের পর বনের অভ্যন্তরে বাঘের বিচরণ দেখতে ট্যুরিজম লঞ্চ ও বোট অগ্রিম বুকিং দিতে শুরু করেছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
ট্যুরিজম সংশ্লিষ্টদের মতে, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার দর্শনার্থী এলেও বাঘের দেখা পেয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা খুবই নগণ্য। পর্যটকরা বন প্রহরীদের কাছে বাঘ দেখার গল্প শুনেই তুষ্ট থাকেন।
বন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনে দিনে বাঘের দেখা পাওয়ার সুযোগ খুবই কম। কারণ এ সময় বনের অভ্যন্তরে পর্যটনবাহী নৌযান চলাচল ও পর্যটকদের আনাগোনা থাকায় বন্যপ্রাণীরা বনের গহিনে চলে যায়। রাত হলে মিষ্টি পানি খেতে ক্যাম্প ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোর পুকুরে আসে। তাই বিশেষ করে জ্যোৎস্না রাতে পুকুরপাড়ের সুউচ্চ টাওয়ারে বসে ভাগ্যে থাকলে দেখা মিলে যেতে পারে বাংলার বাঘের। কিন্তু হঠাৎ করে দিনেও বাঘের বিচরণ চোখে পড়ছে। সম্প্রতি তিনটি বাঘের একসঙ্গে নদী পার হওয়া এবং শাবকসহ পাঁচটি বাঘের একসঙ্গে বিচরণের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বাঘের বিচরণের এমন আরও কয়েকটি দৃশ্য ধরা পড়েছে বন বিভাগ, ট্যুরিস্ট গাইড ও পর্যটকদের ক্যামেরায়।
সুন্দরবনের পর্যটন ব্যবসায়ী (ফেমাস ট্যুরস বিডি, সিইও) তানজির হোসেন রুবেল বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবননির্ভর পর্যটন পেশায় জড়িত থাকায় বহুবার বনে ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছি। তখন দেখেছি নদীর কূলে কুমিরের রোদ পোহানো, হরিণ, শূকর আর বানরের বিচরণ। ছোট খালে মাছ শিকারে ব্যস্ত ভোঁদড়, গাছের খোড়লে বিষধর সাপ, বিচিত্র রঙের পাখি ইত্যাদি। তবে এতকিছু দেখার পরও আকর্ষণ থেকে যায় রয়েল বেঙ্গল টাইগারের প্রতি। ডোরাকাটা রাজকীয় চলনের এই বাংলার বাঘ দেখতে পাওয়া যেন সোনার হরিণ।
তিনি বলেন, ৩১ মার্চ কটকার ছোট খাল থেকে বেরিয়ে কেবল বড় খালে পড়েছি। পড়ন্ত বিকাল। আমি নৌকার সামনে বসে হঠাৎ দেখি, দুপা ঝুলিয়ে ডোরা কাটা এক কিশোর বয়সি বাঘ গাছের ডালে বসে আছে। আমার সঙ্গে ছিল ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফারদের একটা ছোট দল। তারা আধুনিক ক্যামেরায় ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। গাঢ় হলুদ-কালো ডোরাকাটা চকচকে শরীরের বাঘটি বিকালের নরম আলোয় অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল। একটু লেজ নাড়িয়ে আর রাজকীয় চাহনিতে বুঝিয়ে দিচ্ছিল সে-ই এই বনের রাজা। স্থানীয় ট্যুর ব্যবসায়ীরা জানান, হঠাৎ সুন্দরবনে বাঘের বিচরণ বেড়ে যাওয়ায় পর্যটকরা কৌতূহলী হয়ে উঠছেন। তাই অনেকেই ঈদের পরে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে অগ্রিম বুকিং দিচ্ছেন লঞ্চ ও ট্যুর বোট। সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির বলেন, ১৮ জানুয়ারি পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের শ্যালা নদী সাঁতরে পার হয় তিনটি বাঘ। এ দৃশ্য চোখে পড়ে দর্শনার্থী ও বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এরপর ১২ মার্চ একই রেঞ্জের ছিটে/ছিটা কটকা এলাকার খালের পাড়ে এক জায়গায় পাঁচটি বাঘের দেখা মেলে। এছাড়া বাঘের দেখা মিলছে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল, হাড়বাড়ীয়া, আন্ধারমানিক, চরাপুটিয়া ও কটকা ক্যাম্প ও পর্যটন স্পটগুলোয়। ৯, ১০ ও ১২ ফেব্রুয়ারি করমজলে দেখা গেছে জোড়া বাঘের। সবশেষ ৩১ মার্চ কটকার পূর্ব খালে বাঘের দেখা পান পর্যটকরা। সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির বলেন, সর্বশেষ ২০১৮ সালে বাঘ গণনা হয়েছে। ক্যামেরা ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে এ গণনায় তখন বনে ১১৪টি বাঘের অস্তিত্ব মিলে। এর আগে ২০১৫ সালে একই পদ্ধতিতে গণনায় বাঘের সংখ্যা হয়েছিল ১০৬টি।
আপনার মতামত লিখুন :