ঢাকা ০২:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকার গাজীপুরে গুলিবিদ্ধ গার্মেন্টস শ্রমিক রাসেলের ঝালকাঠি বাড়িতে শোকের মাতম

রিপোর্ট : ইমাম বিমান
  • আপডেট সময় : ০৯:৩০:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ১৩১ বার পড়া হয়েছে
সময়কাল এর সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঢাকার গাজীপুরে শ্রমিক আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত
ডিজাইন এক্সপোর্ট গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর বিদ্যুৎ মিস্ত্রী রাসেল হাওলাদার (২২) এর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলাধীন উত্তরমানপাশা গ্রামে রাসেলের মৃত্যুতে শোকাহত গ্রামের মানুষ। আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে।

গত ৩০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১২ টার দিকে রাসেলের গুলিবিদ্ধ হবার খবর জানতে পারে পরিবারের সবাই। রাসেলের বেতনের টাকায় যে সংসার ও ছোট ভাইয়ের পড়াশুনার খরচ চলত সেই সন্তান ও ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদে পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পরেছে। রাসেলের একমাত্র আশা ছিল সামান্য বেতনের টাকা জমিয়ে বাড়িতে নিজেদের একটি ঘর করার। নিহত রাসেলের গুলিবিদ্ধ হবার আগে তার সাথে থাকা কোম্পানীর অপর বিদ্যুৎ মিস্ত্রী মো. সুফিয়ান বলেন, আমরা বাসার যাবার সময় খোলা মাঠের মাঝে আসার সাথে সাথে পুলিশের গুলিতে রাসেল গুলিবিদ্ধ হয়। প্রথম গুলিটি ওর বুকের ডান পাশে দ্বিতীয় গুলি হাতে লাগে। তখন ও বাবা মা বলে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়। আমি তখন ওকে নিয়ে টঙ্গি হাসপাতালে নিয়ে যাই। যাবার পথেই ও মারা যায়।

কথা হয় রাসেলের বাবা মো. হান্নান হাওলাদারের সাথে। তিনি তার সন্তানের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি কাঠ বিক্রির ছোট ব্যবসা করি। আমার ২ ছেলে, ১ মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। রাসেল বড়। ছোট ছেলে নাইম হাওলাদার এবার এইচএসসিতে বিনয়কাঠি কলেজে পড়া শুনা করে। ওর পড়াশুনা
এবং সংসারের খরচ বহন করত রাসেল। কত টাকা বেতন পায় কোন দিন জানতে চাইনি। রাসেলের সাথে আমার শেষ কথা হয় ২৯ অক্টোবর রাতে। টাকার অভাবে এইচএসসি পাশ করার পর আর পড়াতে পারি নাই। তাই এই কোম্পানীতে কাজ পেয়ে ঢাকায় চলে যায় ৮ বছর আগে। ওর জীবনের একটা স্বপ্নই ছিল। সেটা হলো আমাদের ভাড়া বাড়ি থেকে নিয়ে নিজস্ব জমিতে টিনশেড ঘরে নিয়ে যাবে। আমার স্বচ্ছলতা থাকলে ওকে আমি এই চাকরী করতে দিতামনা। কিন্তু আজকের সে নিরপরাধ হয়েও পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ায় আমি এর ন্যায় বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছি সরকারের কাছে।

নিহত রাসেলের মা রাশিদা বেগম বলেন, আমাকে বাবায় বলছে মা আমি ডিসেম্বরে আসব। তোমার জন্য কি আনব জানাবা। আমি বলছি তুমি সহিসালামতে ফিরে আসো। এইডাই আমি চাই আল্লাহর কাছে। একমাত্র বোন মিম আক্তার সব সময় ভাইয়ের খোজ খবর নেয়ার কথা জানিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। বলেন ভাই আমাকে আর কোনদিন ফোন করবেনা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ঢাকার গাজীপুরে গুলিবিদ্ধ গার্মেন্টস শ্রমিক রাসেলের ঝালকাঠি বাড়িতে শোকের মাতম

আপডেট সময় : ০৯:৩০:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩

ঢাকার গাজীপুরে শ্রমিক আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত
ডিজাইন এক্সপোর্ট গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর বিদ্যুৎ মিস্ত্রী রাসেল হাওলাদার (২২) এর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলাধীন উত্তরমানপাশা গ্রামে রাসেলের মৃত্যুতে শোকাহত গ্রামের মানুষ। আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে।

গত ৩০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১২ টার দিকে রাসেলের গুলিবিদ্ধ হবার খবর জানতে পারে পরিবারের সবাই। রাসেলের বেতনের টাকায় যে সংসার ও ছোট ভাইয়ের পড়াশুনার খরচ চলত সেই সন্তান ও ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদে পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পরেছে। রাসেলের একমাত্র আশা ছিল সামান্য বেতনের টাকা জমিয়ে বাড়িতে নিজেদের একটি ঘর করার। নিহত রাসেলের গুলিবিদ্ধ হবার আগে তার সাথে থাকা কোম্পানীর অপর বিদ্যুৎ মিস্ত্রী মো. সুফিয়ান বলেন, আমরা বাসার যাবার সময় খোলা মাঠের মাঝে আসার সাথে সাথে পুলিশের গুলিতে রাসেল গুলিবিদ্ধ হয়। প্রথম গুলিটি ওর বুকের ডান পাশে দ্বিতীয় গুলি হাতে লাগে। তখন ও বাবা মা বলে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়। আমি তখন ওকে নিয়ে টঙ্গি হাসপাতালে নিয়ে যাই। যাবার পথেই ও মারা যায়।

কথা হয় রাসেলের বাবা মো. হান্নান হাওলাদারের সাথে। তিনি তার সন্তানের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি কাঠ বিক্রির ছোট ব্যবসা করি। আমার ২ ছেলে, ১ মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। রাসেল বড়। ছোট ছেলে নাইম হাওলাদার এবার এইচএসসিতে বিনয়কাঠি কলেজে পড়া শুনা করে। ওর পড়াশুনা
এবং সংসারের খরচ বহন করত রাসেল। কত টাকা বেতন পায় কোন দিন জানতে চাইনি। রাসেলের সাথে আমার শেষ কথা হয় ২৯ অক্টোবর রাতে। টাকার অভাবে এইচএসসি পাশ করার পর আর পড়াতে পারি নাই। তাই এই কোম্পানীতে কাজ পেয়ে ঢাকায় চলে যায় ৮ বছর আগে। ওর জীবনের একটা স্বপ্নই ছিল। সেটা হলো আমাদের ভাড়া বাড়ি থেকে নিয়ে নিজস্ব জমিতে টিনশেড ঘরে নিয়ে যাবে। আমার স্বচ্ছলতা থাকলে ওকে আমি এই চাকরী করতে দিতামনা। কিন্তু আজকের সে নিরপরাধ হয়েও পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ায় আমি এর ন্যায় বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছি সরকারের কাছে।

নিহত রাসেলের মা রাশিদা বেগম বলেন, আমাকে বাবায় বলছে মা আমি ডিসেম্বরে আসব। তোমার জন্য কি আনব জানাবা। আমি বলছি তুমি সহিসালামতে ফিরে আসো। এইডাই আমি চাই আল্লাহর কাছে। একমাত্র বোন মিম আক্তার সব সময় ভাইয়ের খোজ খবর নেয়ার কথা জানিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। বলেন ভাই আমাকে আর কোনদিন ফোন করবেনা।